পুসি ক্যাট, পুসি ক্যাট, হয়্যার হ্যাভ ইউ বিন? আই'ভ বিন টু লন্ডন টু সি দ্যা কুইন । পুসি ক্যাট, পুসি ক্যাট, হোয়াট ডিড ইউ ডু দেয়ার? আই ফ্রাইটেন্ড অ্যা লিটল মাউস আন্ডার হার চেয়ার ।
আমি যখন ছোট ছিলাম, মনে হয় স্কুলে ভর্তি হইসি বা হইনাই, এমন সময়ে প্রথম বার আমার এই পুসি ক্যাটের লগে পরিচয় হয়। সেইটাতে সেকেন্ড লাইনে ছিল “আই'ভ বিন টু লন্ডন টু সি দ্যা কুইন”। পরে মনে হয় প্যারিসেও যায় পুসি ক্যাটটা…আমার তখন এতো কিছু মনে হয় নাই, ছোট আসিলাম, অনেক কিছু বুঝতাম…🙂 বড় হইতে হইতে বুঝ জ্ঞাণ কইমা গেসে।
তো বইতে ছড়ার লগে ছবিও আঁকা আসিল, তাতে পুসি ক্যাট টার রং আসিলো সাদা। একটা রানি ছিল, একটা চেয়ারের ছবিও আঁকা আসিলো। রানি চেয়ারে বইসা আসিল, পুসি ক্যাট টা ফিরা আইতেসে লন্ডন থেইকা… লন্ডন টাওয়ার, আর বিগ বেনের ছবি। যাতে একটা বিরাট ঘড়ি লাগানো… টাইম খেয়াল নাই, কিন্তু মনে হয় ১২ টা বাজতেসিল ছবির ঘড়িতে।
কার রারোটা?

যাই হোক রানীরে ক্যান একটা বিলাই দেখতে যায় তা আমি তখন প্রশ্ন করি নাই। কিন্তু আমি মায়েরে জিগাইসিলাম বাংলাদেশ থেইকা বিলাইটা ক্যামনে এতো দূর গেলো… আমার মা কইলো তুই বড় হইলে তুইও যাইতে পারবি। বিলাইটা তো বড় হইসে তাই যাইতে পারসে। তোরো যাইতে হবে একদিন… আমি মনে মনে ভাবলাম, হায় খোদা, ক্যামনে যাবো এতো দূর!!
ছোট থাকলে সবাই খালি বড় হওয়ার কথা বলে… কিন্তু বড় ক্যামনে হয় মানুষ? বড় হইলে আমার লন্ডন যাইতে পারার কথা। আমি এখনো তো লন্ডন গেলাম না… আমি কি তাইলে এখনো বড় হই নাই? আর বড় হওয়ার চান্স কি আছে আমার? এদিকে রাণীতো গেলো লাস্ট ইয়ারে মইরা… তাইলে এখন উপায়? লন্ডন, প্যারিস গেলে কি “বড় হব” আমি?
বাংলাদেশে এতো বছর ঘুইরা মনে হইলো “হব”। এই সাউথ এশিয়ান দেশগুলার বা ফর্মার কলোনি গুলার মানুষদের বড় হওয়ার প্রসেস হইতেসে জন্মের পর যেদিন সে লন্ডন বা প্যারিস যায়।
সেদিন সে “আসল” বড় হয়। সবাই তারে বাহবা দেয়। রক্তে ফিল করা যায় একটা জোর।
আরেকটা উপায় আছে… ঐদিকের সাদা চামড়ার কেউ যখন তারে ‘বড়’ বলে, তখনো সে বড় হয়্যা উঠে দেশে। তার আগে আশেপাশের লোকজন ঠিক য্যানো চিনতে পারে না, একটা সন্দেহে থাকে। ইউরোপের সাথে সাথে অবশ্য এখন আমেরিকাও এড হইসে… ইকোনমিক হায়ারার্কিতে এখন আমেরিকা দুনিয়াতে সবার উপ্রে। একটা সুপার পাওয়ার। তাই তারা বড় বল্লে সেটাও একটা বেশ বড় ব্যাপার। কলোনির মানুষ নিজেরা নিজেদের চিনতে পারে না। তারা মূল্যায়ন করার অথরিটি রাখে না এখনো… “স্বাধীন” হওয়ার এতো বছর পরো… ক্যামন না ব্যাপারটা? এই চিনতে না পারার মূল্য কিন্তু প্রতিদিন আমরা দিতেসি আমাগো সমাজে, রাষ্ট্রে। নিজেদের চিনতে না পারা জ্ঞানের পথে সবচে বড় বাঁধা… ফর্মার কলোনি গুলা তাই জ্ঞান তৈরি করতে পারে না, ইনফরমেশন আর প্রযুক্তি ধার কইরা চলে কেবল। যদিও তাগো জ্ঞান উৎপাদনের হিস্ট্রি বহু পুরানা…
ব্যাপারটারে অনেকটা জ্বর হওয়ার মতো লাগে আমার কাছে… জ্বর হইলে যেমন শরীল দুর্বল লাগে… পারা জিনিসো আর পারা যায় না। অল্পতেই হাপায় উঠে। স্বাদের জিনিস মুখে লাগে তিতা। কলোনি গুলার জ্বরের আসর এখনো কাটে নাই।
ছোট বেলায় তো আর এতো কিছু আসে নাই মাথায়… কিন্তু কয়েক বছর পরে আমার মনে হইসে যে রাণীরে দেখতে একটা বিলাই লন্ডন গেলো ক্যান? আমাগো বাংলাদেশে তো কোনো রাণী নাই। তো এই রাণীরে তাইলে ক্যান দেখতে গেলো এই পুসি ক্যাটটা? আর গেলোই যখন সেইটা আবার আমারে জানানোর দরকার টা কি ছিল? ও গেসে তো গেসে… আমার জানার কি দরকার? আই হ্যাড বেটার থিংকস টু ডু… রাস্তায় বন্ধু বান্ধবের লগে খেলতে পারতাম সেই টাইমে আমি। বা চুপচাপ বইসা মেঘ দেখতে পারতাম। দুইটাই ছোটবেলায় আমার প্রিয় কাম আসিল।
ম্যাও ক্যাটটার আবার কি সাহস… শুধু যে গেসে তাই না, তার চেয়ারের তলের একটা ইন্দুররে আবার সাইজো দিয়া আইসে!! অসাধারণ!!
ইন্দুরটার রং কালো ছিলো যদ্দুর মনে পড়ে। আমার মেমোরি এখন বইসা বইসা বানাইতেও পারে রং গুলারে। বলা যায় না… তো একটা সাদা বিলাই টুকটুকা ফর্সা লাল রাণীর গোল্ডেন চেয়ারের নিচের থেকে কালো ইদুর ধইরা দিসে রাণীরে। এই কালো ইন্দুর কারা বন্ধু গণ? চার্চিল সাবকে জিজ্ঞেস করা যাইতে পারে। ‘৪৩ এর দুর্ভিক্ষে বা তারো আগে ১৮৫৭ তে বা তারো আগে ১৭৫৭ তে এর উত্তর পাওয়া যাইতে পারে।
একটা মজার ব্যাপার কি- ছড়াটা ছোটবেলায় পইড়া নিজেরে কিন্তু আমার কখনোই রাণী মনে হয় নাই। আমার কল্পনার সেই সাহসই হয় নাই অতটুকু যাওয়ার। ক্যানো গেলোনা কল্পনা? আমি পোলা মানুষ দেইখা? রাণী না থাইকা রাজা থাকলে কি আমি নিজেরে ঐখানে কল্পনা করতে পারতাম? মনে হয় না… আমি প্রচুর রাজা রাণীর গল্প শুনসি কিন্তু এই রাণী দেখতে ভিন্ন। সুয়ো রাণী, দুয়ো রাণীর চে আলাদা। এই রাণী লন্ডনের… বাংলায় বইসা লন্ডন দেখতেসিলাম আমি… আমিতো প্রথম থেকেই “আদার” হয়্যা গেসি এ ছড়ায়।
আবার আমি নিজেরে ইন্দুরো কল্পনা করি নাই… ঐটাতো আমি নিজেই ডরাই, ঘিন লাগে আমার।
আমি নিজেরে কল্পনা করসি একটা তুলতুলে ফুটফুটে সাদা বিলাই হিসাবে। যে রাণী মাতার সাথে দেখা কইরা তার রাজকীয় চেয়ারের ছায়ায় বইসা চেয়ারের ফাউন্ডেশন কাটা ভিলেনাস, ট্রেচারাস, বেশোকর, শয়তান ইন্দুরকে ধরে। ধইরা রাণীমাতার চোখে বড় কিছু একটা হয়্যা উঠে। আপনেরা কি ভিন্ন কিছু ভাবসিলেন নিজেরে ঐ ছড়াটা পড়ার সময়? রাণী বা ইন্দুর?
এগুলা অনেক কিছুই আমি বড় হয়্যা বুজছি, শিখসি, জানসি… ফানো, থিওঙ্গো, সাঈদ, সলিমুল্লা, ফরহাদ সাবেরা সহ আরো নানান জনে আলাপ করসে এই সব ব্যাপারে। তাগো আলাপ পইড়া-শুইনা যেমন বুজছি, তেমনি অনেক কিছু সমাজে চলতে চলতে টের পাইসি, দেখসি। কিন্তু একটা জিনিস সেই ছোট বেলাতেই বেখাপ্পা লাগসে আমার, রাণী এতো বড়লোক,বিরাট প্রাসাদ তার, তাইলে তার চেয়ারের নিচে ইদুর ক্যান থাকে? ইন্দুর হীন সিংহাসন কি সে বানাইতে পারতো না?
কই আমার পড়ার টেবিল চেয়ারের তলে তো কোনো ইন্দুর নাই। চেয়ারের নিচে ইন্দুর দেখলে তো আমি ভয়েই মারা যাইতাম সেই ছোট কালে। অথবা লাফ দিয়া পালাইতাম। কিন্তু রাণী কি সুন্দর চা খাইতেসে সেই ইন্দুর ঢাকা চেয়ারের উপর বইসা বইসা। আমি ভিতু, রাণীর কি সাহস! বাআবাহ…
আমি এই প্রশ্নটাও জিগাইসিলাম আম্মারে… তার এন্সারটা আমার মনে নাই এখন আর।
কিন্তু এখন বুঝি রাণীরা সব সময়েই এইসব ইন্দুর বিলাই খেলা জারি রাখে। তারা ইন্দুরো বানায় বিড়ালো বানায়, নানান টাইটেল। তারপরে তারা খ্যালা দ্যাখে আর খুব এটিকেটের সাথে সাউন্ড ছাড়া সিপ করে খায় আর্ল গ্রে।
পোস্টটা ভালো লাগলে শেয়ার কইরেন যদি কারো সাথে শেয়ার করতে চান…
বা সাবস্ক্রাইব কইরেন নিউজলেটারে… যদি না করে থাকেন অলরেডি। কারণ প্রতি সপ্তায় পাবলিশ করি আমি… 🙂